সকাল ১১টা।অফিসে তখন সবাই যে যার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত।অফিসের বস তূনীর চাটারজি, ওনার p.a. মালবিকা কে তলব করলেন। মালবিকা তাড়াতাড়ি চলে গেলেন বসের কেবিনে। আমাকে ডেকেছেন স্যার? ও মলি ,গতকাল তোমাকে একটা দরকারি ফাইল দিয়েছিলাম, ওটা আমার এখনি দরকার। ok sir আমি আনছি। মলি মানে মালবিকা মজুমদার, ফাইল টা এনে sir কে দিলো।বললো sir এটা তো?
তূনীর ফাইল টা খুলে দেখলো, বললো হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই। মালবিকা বললো আমি তাহলে আসি sir । না তুমি বসো আমার কিছু কথা আছে। বলুন sir , তুমি কাল খুব ভোরে আমার সাথে যাবে?কোথায় sir?আমি আগামীকাল নতুন প্রোজেক্ট এর ব্যাপারে রায়পুর যাবো।তুমি ও যাবে আমার সাথে।ইতস্তত করে মালবিকা বললো sir আমি বাইরে কখনও অফিসের কাজে যাইনি এবং রাত ও কাটাই নি। বুঝতে তো পারছেন, সাধারণ পরিবারের মেয়ে, বাবা মা এগুলো পছন্দ করেন না। তাই ক্ষমা প্রার্থনা করছিsir ।
তুমি কি বলছো মিস মলি, তোমার কোনো ধারণা আছে? তোমার কি চাকরি টা দরকার নেই? নানা sir চাকরি টা না থাকলে অসুস্থ বাবার ওষুধ,ভায়ের পড়াশোনার খরচ, বাড়ি ভাড়া কি করে চলব, একদম মারা যাবো sir । তাহলে এই বস্তাপচা সেন্টিমেন্ট ছেড়ে, যা বলছি সেটাই করো। কাল সকাল সাতটায় হাওড়া স্টেশন গেটে চলে আসবে। আমি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো। অবনত মস্তকে মাথা নাড়িয়ে মালবিকা চলে গেল বাড়ি ফিরে এসে নিজের মনের সাথে নিজে যুদ্ধ করলো খানিকটা। মা বললো মলি আজ এত চুপচাপ কেন রে, শরীর খারাপ নাকি?
না মা তোমার সাথে একটু কথা আছে। কাল আমাকে অফিসের কাজে কয়েক দিনের জন্য বাইরে যেতে হবে। না গেলে চাকরি টা থাকবে না।তাই আমি কাল ভোরে বেরিয়ে যাবো। বাবা কে তুমি সামলে নিয়ো। সে কি মলি সমর্থ মেয়ে বাইরে রাত কাটাবি, লোকে এ নিয়ে নানা কথা বলবে মা। মা, লোকে আমাদের স্্সার টা চালাবে না।আমার সমস্যা আমাকেই মেটাতে হবে। তাই এ নিয়ে আর কথা বাড়িয়ো না। আমাকে প্যাকি্্ টা সারতে হবে।
পরদিন কথামত নির্দিষ্ট জায়গায় মালবিকা উপস্থিত হলো। যথারীতি বস ও গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।আজ মলি একটা নীল রঙের সালোয়ার কামিজ, আর সাথে গোলাপি রঙের ওড়না, চোখে সানগ্লাস, হালকা পিঙ্ক কালারের লিপস্টিক, অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল।বস তূনীর চ্যাটার্জী মলিকে দেখে বেশ মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। তার পর একটু ধাতস্থ হয়ে গাড়ি র লক খুলে দিল। মালবিকা পিছনের সিটে বসতে উদ্দত হলো। তূনীর চ্যাটার্জী বললো, কোন দরকার নেই, আমার পাশের সিটে বসো আর সিটবেল্ট টা বেধে নাও।
অগত্যা তাই করলো মালবিকা, গাড়ি চলতে শুরু করলো, সুন্দর বিদেশি পারফিউম এর গন্ধ, গাড়ির মধ্যে। একটা সুন্দর গান বাজতে শুরু করলো। ভীষণ ভালো লাগলো মালবিকা র। দারিদ্র্যতার জীবনে এমন মনোরম জার্নি এর আগে কখনও করে নি ও ।দুজনে ই চুপচাপ। মাঝে মাঝে শুধু তূনীর ওকে আড়ে আড়ে দেখছিল। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে তূনীর চ্যাটার্জী বললো, আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন? এই এতদূর আসতে হলো বলে।
মালবিকা বললো না স্যার, পেটে যখন ক্ষিদের জ্বালা থাকে, তখন কোনো চয়েস না থাকাই ভালো। কাজের জায়গায় বিকাল ৫টা নাগাদ ওরা পৌঁছে গেল।আগের থেকে ই দুটো রুমের কথা বলা ছিল।হোটেল এর দুটো রুমের চাবি দুজন কে দেওয়া হয়েছে। যে যার লাগেজ নিয়ে রুমে চলে গেল।রুমে গিয়ে মালবিকা ফ্রেস হয়ে নিল। একটা ম্যাজেন্টা কালারের শাড়ি পরলো,আর হালকা প্রসাধন।তাতেই ওকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছিল। জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায়, মালবিকা দেখছে, জায়গাটা বেশ মনোরম। মনে মনে sir কে ধন্যবাদ দিচ্ছে, প্রথমত sir সত্যিই ভদ্রলোক, তাই তার জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্তা করেছে, আর দ্বিতীয়ত কাজের সুত্রে হলেও এমন মনোরম পরিবেশে সে আসতে পেরেছে। একটু পরেই দরজায় নক, মালবিকা দরজা খুলে দেখে তূনীর চ্যাটার্জী। ফ্রেস হয়ে একটা ক্যাজুয়াল ড্রেস পরেছেন। বেশ লাগছে ওনাকে।অফিসে সব সময় সুট,টাই এধরনের পোশাকে ওনাকে দেখেছে। আজ একদম অন্যরকম লাগছে। মলিকে বললো চলো সন্ধ্যা হতে দেরী আছে, আশপাশে একটু ঘুরে আসা যাক।
মালবিকা ও হাসিমুখে বেরিয়ে পড়লো।গাড়ি না নিয়ে দুজনে হাটা পথ ধরলো। দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। কত নাম না জানা ফুল পথের ধারে ফুটে আছে। পাহাড়ি নদী কুলুকুলু শব্দে বয়ে চলেছে। নাম না জানা পাখি গুলো বাসায় ফিরে যাচ্ছে। সূর্য অস্ত যাবার রক্তিম আলোয় মালবিকা কে ভীষণ সুন্দর লাগছিল। তূনীর মালবিকা কে না জানিয়ে, কয়েকটা ছবি মোবাইল বন্দি করে নিয়েছে। হাটতে হাটতে দেখে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান। মালবিকা ভাবলো, অতবড় মানুষ এখানে হয়তো চা খাবেন না।তাই বললো sir আপনি একটু আস্তে হাঠুন,আমি একটু চা খেয়ে আসছি। তূনীর অবাক হয়ে বললো, আপনি একা খাবেন, আর আমি? মালবিকা লজ্জা পেয়ে বললো, আপনি খাবেন sir। আমি বুঝতে পারি নি। এই বলে দুটো মাটির ভাড়ে চা আর নাম না চেনা দুটো বিস্কুট দিয়ে দুজনে পরম তৃপ্তি নিয়ে চা খেলো।
No comments:
Post a Comment